এই নিবন্ধে আমরা জন্য কিভাবে খুব সহজেই বাড়িতে প্রভু Jagannathdev -এর পূজা ও রথযাত্রা পূজা (Jagannath Rath yatra puja at home) করতে পারি। খুব বেশি কিছু পূজা সামগ্রীর প্রয়োজন পড়েনা। সহজেই স্বল্প খরচের মধ্যে আমরা বাড়িতে খুব সুন্দর ভাবে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব (Jagannath Rath yatra puja at home) পালন করতে পারি।
আষাঢ়ের শুক্লপক্ষীয় পুষ্যানক্ষত্রযুক্তা দ্বিতীয়াতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা হইয়া থাকে; এজন্য সেই দিনে যাত্রা, মহোৎসব ও বহু ব্রাহ্মণ ভোজন এইসব করা হয়ে থাকে। বিশ্বাস করা হয় এই শুভ দিনে বৈষ্ণব সেবা, ব্রাহ্মণ সেবা করলে, ভগবানের প্রীতি অর্জন করা যায়।
Table of Contents
Jagannath Rath yatra puja at home: রথযাত্রা ও জগন্নাথ পূজাবিধি
যেকোনো পূজা শুরু করার আগে শুদ্ধীকরণ দিয়ে শুরু করে নিত্যক্রিয়াদি করে নিতে হবে। বিশেষ পূজা শুরু করার আগে সমস্ত পূজার নিয়ম একইরকম হয়। আচমন পর্ব তারপর পুষ্পশুদ্ধি, জলশুদ্ধি এবং আসনশুদ্ধি এইসব ক্রিয়া সম্পন্ন করে নিতে হবে। যেকোনো ঘরোয়াপূজার নিয়ম বিস্তারিতভাবে ঘরোয়া পূজার সাধারণ নিয়ম পেইজে উল্লেখ করা হয়েছে।
Jagannath Rath yatra puja at home: পূজার উপকরণ
কর্পূর, অগুরু, দুর্বা, সাদা ফুল, সাদা পদ্ম, সাদা ফুলের মালা, শ্বেত চন্দন, তুলসী, তুলসীর মালা, গঙ্গা জল অথবা পরিষ্কার জল ও গোলাপ জল।
Jagannath Rath yatra puja at home: পূজার নিত্যক্রিয়া
Jagannath Rath yatra puja at home: পূজার সংকল্প
পূজা শুরু করার আগে সংকল্প করে নিতে হবে। যেকোনো পূজার আগে সংকল্প বিধি করেই পূজা করা উচিৎ।
জগন্নাথ দেবের রথযাত্রাপূজার সংকল্প মন্ত্রঃ- বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য আষাঢ়ে মাসি শুক্লে পক্ষে দ্বিতীয়ায়ান্তিখৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা বিষ্ণুলোকগমনকামো গণপত্যাদিনানাদেবতাপূজাপূর্ব্বক – শ্রীকৃষ্ণস্য রথোৎসবযাত্রামহং করিয্যে।
উপরিউল্লিখিত মন্ত্র দিয়ে আপনি নিত্য জগন্নাথের পূজার সংকল্প ও করতে পারবেন। শুধু তিথি আর মাসের নাম পরিবর্তন হইবে।
|| জগন্নাথের ধ্যান মন্ত্র ||
Jagannath -এর ধ্যান মন্ত্র দিয়ে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার বিশেষ পূজা শুরু করতে হইবে। হাতে কিছু ফুল নিয়ে করজোড় করে ধ্যান মন্ত্র পাঠ করে প্রভুর চরণে নিবেদন করতে হবে।
জগন্নাথের ধ্যান- ওঁ পীনাঙ্গং দ্বিভুজং কৃষ্ণং পদ্মপত্রারতেক্ষণম্। মহোরসং মহাবাহুং পীতবস্ত্রং শুভাননম্।। শঙ্খ-চক্র-গদাপাণিং মুকুটাঙ্গদভূষণম্। সর্ব্বলক্ষণসংযুক্তং বনমালাবিভুষিতম্। দেবদানবগন্ধর্ব্বর্যক্ষ-বিদ্যাধরোরগৈঃ। সেব্যমানং সদা দারুং কোটিসূর্য্যসমপ্রভম্। ধ্যায়ন্নারায়ণং দেবং চতুর্ব্বর্গফলপ্রদম্।।
|| বলভদ্র ধ্যান মন্ত্র ||
জগন্নাথের ধ্যান মন্ত্র দিয়ে সম্পন্ন করে বলভদ্র ধ্যান মন্ত্র পাঠ করে নিতে হবে । হাতে সাদা চন্দন সহযোগে কিছু ফুল নিয়ে করজোড় করে বলভদ্র ধ্যান মন্ত্র পাঠ করে একই ভাবে প্রভুর চরণে নিবেদন করতে হবে।
বলভদ্র ধ্যান- ওঁ বলঞ্চ শুভ্রবর্ণাভং শরদিন্দুসমপ্রভম্। কৈলাসশিখরাকারং ফণাবিকটবিস্তরম্। নীলাম্বরধরঞ্চোগ্রং বলং বলমদোদ্ধতম্। কুণ্ডলৈকধরং দিব্যং মহামুষলধারিণম্। মহাবলং হলধরং রৌহিণেয়ং বলং প্রভুম্।
|| শ্রীশ্রীবলরাম-প্রণামমন্ত্রঃ ||
বলভদ্র ধ্যান মন্ত্র সম্পন্ন করে বলরাম প্রণাম মন্ত্র পাঠ করে নিতে হবে । হাতে সাদা চন্দন সহযোগে কিছু ফুল নিয়ে করজোড় করে বলভদ্র প্রণাম মন্ত্র পাঠ করে একই ভাবে প্রভুর চরণে নিবেদন করতে হবে।
প্রণামমন্ত্রঃ- নমস্তে তু হলগ্রাম! নমস্তে মুষলায়ুধ!। নমস্তে রেবতীকান্ত! নমস্তে ভক্ত-বৎসল! ॥ নমস্তে বলিনাং শ্রেষ্ঠ! নমস্তে ধরণীধর!। প্রলম্বারে! নমস্তে তু ত্রাহি মাং কৃষ্ণ-পূর্ব্বজ! ॥
|| সুভদ্রা ধ্যান মন্ত্র ||
একই ভাবে বলভদ্র ধ্যান মন্ত্র সম্পন্ন করে, হাতে সাদা চন্দন সহযোগে কিছু ফুল নিয়ে করজোড় করে সুভদ্রা ধ্যান পাঠ করতে হবে। সুভদ্রা ধ্যান মন্ত্র পাঠ করে প্রভুর চরণে নিবেদন করতে হবে।
বলভদ্র ধ্যান- ওঁ বলঞ্চ শুভ্রবর্ণাভং শরদিন্দুসমপ্রভম্। কৈলাসশিখরাকারং ফণাবিকটবিস্তরম্। নীলাম্বরধরঞ্চোগ্রং বলং বলমদোদ্ধতম্। কুণ্ডলৈকধরং দিব্যং মহামুষলধারিণম্। মহাবলং হলধরং রৌহিণেয়ং বলং প্রভুম্।
রথযাত্রা ও জগন্নাথ পূজার ভোগ নিবেদন
প্রভুকে পরিষ্কার পাত্রে ভোগ নিবেদন করতে হবে। ঘন্টা বাজিয়ে তিনবার শ্রীপ্রভুর উদ্দেশ্যে প্রণাম মন্ত্র উচ্চারণ করে ভোগ নিবেদন করতে হবে।
প্রণাম মন্ত্র- নম ওঁ বিষ্ণুপাদায় কৃষ্ণপ্রেষ্ঠায় ভূতলে। শ্রীমতে (গুরুদেবের নাম) ইতি নামিনে।।
রথযাত্রা ও জগন্নাথ পূজার ভোগ আরতি পর্ব
শাঁখ বাজিয়ে ভোগ আরতি শুরু করতে হবে। কিভাবে আরতি করতে হবে সেই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে ঘরোয়া পূজার সাধারণ নিয়ম পেইজে উল্লেখ করা হয়েছে।
শ্রীশ্রীজগন্নাথাষ্টকম্ পাঠ
জগন্নাথ সুভদ্রা বলরাম প্রণাম যন্ত্র উচ্চারণ করে সষ্টাঙ্গ প্রণাম জানিয়ে শ্রীশ্রীজগন্নাথাষ্টকম্ পাঠ করে নিতে হবে।
শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের প্রচলিত স্তব
** শ্রীল সনাতন গোস্বামীপাদ বিরচিতঃ **
হে শ্রীজগন্নাথ। নীলাচল শিরোমণি। হে দারুব্রহ্মা। ঘনশ্যাম, হে পুরুষোত্তম। আমার প্রতি প্রসন্ন হও ॥ ১॥
হে প্রফুল্ল পুণ্ডরীকাক্ষ। হে লবণ-সমুদ্রতটের অমৃত। হে গুটিকোদর। নানাভোগবিলাসিন্। আমাকে পালন কর ॥২॥
তুমি স্বভক্তগণকে নিজের অধরামৃত দান কর, ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজা তোমার প্রসন্নতা লাভ করিয়াছেন। তুমি সুভদ্রার লালনে ব্যগ্র, হে রামানুজ। তোমার চরণে নমস্কার ॥৩॥
তুমি গুণ্ডিচারথ যাত্রাদি বিবিধ মহোৎসবের বর্ধন করিয়াছ। এ ভক্তবৎসল। হে গুণ্ডিচারথ ভূষণ। তোমাকে বন্দনা করি ॥৪॥
তোমার চিত্ত সতত দীনহীন মহানীচজনকেও দয়া করিবা জন্য উদ্বুদ্ধ থাকে। তুমি নিত্যই নূতন নূতন মহিমা প্রদর্শন করাও, ও শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রিয় অথবা শ্রীচৈতন্যই তোমার প্রিয় কিম্বা তুমি চিন্ময় এবং সকলেরই বল্লভ। তোমার চরণে প্রণত হইতেছি।
বিশেষ Rath Yatra পূজা
Rath Yatra -এর বিশেষ পূজার দিন উপরিউল্লিখিত পূজা সম্পন্ন করে প্রভু শ্রীশ্রীজগন্নাথ বলরাম সুভদ্রাকে রথে প্রতিস্থাপন করতে হবে। তাছাড়া উপরিউল্লিখিত পদ্ধতিতে দৈনিক ঘরোয়া (Ghoruapuja) Jagannath puja সম্পন্ন করা যাবে।
দৈনিক জগন্নাথ পূজার ক্ষেত্রে শুধু জগন্নাথ, সুভদ্রা এবং বলরাম প্রণামমন্ত্র দিয়ে পূজা সম্পন্ন করা যাবে। নিত্য জগন্নাথ পূজায় জগন্নাথ স্তব পাঠ করা উচিৎ। স্তব পাঠ, মন্ত্র পাঠ আমাদের মনে, জীবনে একটি ইতিবাচকতা প্রভাবে ফেলে। তাই আমাদের প্রতিদিন দৈনিক পূজা সম্পন্ন করে আমাদের প্রিয় ভগবানের মন্ত্র অথবা স্তব পাঠ করা উচিৎ।