Bipodtarini Puja vidhi at home: ঘরে করুন বিপদতারিনী পূজা

Bipodtarini Puja vidhi at home

মা দূর্গার একশো আট অবতারের অন্যতম এবং দেবী সংকটনাসিনীর একটি রূপ হলেন বিপুদতারিণীমা।

ভক্তি মনে নিষ্ঠা ভরে এই বিপদতারিনী পূজা করলে যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলে মনে  করা হয়। খুব সহজেই ঘরে করুন এই বিপদতারিনী পূজা (Bipodtarini puja vidhi at home)।

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিবছর আষাঢ় মাসে এই বিপুদতারিণীমার পূজা হয়।

Table of Contents

Bipodtarini puja vidhi at home
Source: Rajpur Bipodtarini Temple

Bipodtarini Puja vidhi at home: ঘরোয়া পূজা পক্রিয়া

Bipodtarini Puja vidhi at home: ঘরোয়া পূজার উপকরণ

  • ঘট, আম পল্লভ, সিস্ ডাব, শাঁখা-পোলা, আলতা, সিঁদুর, পৈতে, গামছা, চাঁদমালা।
  • লাল কায়তন, দূর্বা, 13 -টা পান, 13 -টা সুপারি, 13 -টা এলাচী, 13 -টা লবঙ্গ, লাল বাতাসা, চাল,ডাল, আলু।
  • 13 রকমের ফল, মিষ্টি, দই, পঞ্চশস্য, লাল জবা ফুল, লাল পদ্ম ফুল, অপরাজিতা ফুল।
  • গঙ্গামাটি অথবা ফুল গাছের তলার মাটি, গঙ্গাজল না থাকলে পরিষ্কার টেপের জল।
উপকরণ

Bipodtarini Puja vidhi at home: আচমন পর্ব

পুজোতে বসার আগে নিজের মাথায় এবং পুজোর সব উপকরণে গঙ্গাজল ছিটিয়ে নিতে হবে। হাতে সামান্য গঙ্গা জল নিয়ে আচমন করে নিতে হবে। “নমঃ বিষ্ণু” মন্ত্র তিনবার বলে জল ওষ্টকণ্ঠে নিতে হবে। তারপর পরিষ্কার জলে হাত ধুয়ে নিয়ে হাত জোড় করে বিষ্ণুমন্ত্র স্মরণ করে নিতে হবে।

Bipodtarini Puja vidhi at home: পুষ্পশুদ্ধি

পূজার বেলপাতা, ফুল সবগুলোর উপর লাল চন্দন ছিটিয়ে দিতে হবে। পুজোর ফুলগুলিকে শুদ্ধ করে নিতে হবে পুষ্পশুদ্ধি মন্ত্র পড়ে।

পুষ্পশুদ্ধি

Bipodtarini Puja vidhi at home: আসন প্রতিষ্ঠা

এবার একটি কাঠের জলচৌকি নিতে হবে। জলচৌকির উপর একটি আল্পনা অঙ্কন করে নিতে হবে। আর তার উপর লাল রঙের কাপড় পাততে হবে। এই লাল রঙের কাপড়টির উপর গঙ্গাজল, গোলাপজল ছিটিয়ে সামান্য আতপ চাল, পঞ্চশস্য এবং ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে দিতে হবে।  

লাল রং মায়ের অত্যন্ত প্রিয়। এবার যদি মায়ের কোন পট থাকে সেটি জলচৌকির উপর বসিয়ে, সামনে মায়ের ঘট বসাতে হবে।

Bipodtarini Puja vidhi at home: দীপ প্রজ্বলন

ঘট  বসানোর পূর্বে ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে নিতে হবে। প্রদীপটি দেশি ঘিয়ের প্রদীপ হলে আরো ভালো হয়। আর একটি তিলের তেলের প্রদীপ জ্বালাতে পারলে আরো ভালো।

প্রদীপ

Bipodtarini Puja vidhi at home: ঘট স্থাপন

পুজোর ঘটে, সিস্ ডাবে নারায়ণ চিহ্ন অঙ্কন করতে হবে। সিস্ ডাব না থাকলে হরিতকি বেবহার করা যেতে পারে। আম্র পল্লবের প্রতিটি পাতার অগ্রভাগে এবং মধ্যভাগে সিঁদুরের ফোঁটা দিয়ে ঘটের মধ্যে রাখতে হবে। ঘটের সুপোরিতে সিঁদুর ফোঁটা দিতে হবে। আমপল্লভ পাঁচটি অথবা সাতটি অথবা নটি পাতাযুক্ত হতে হবে।

ঘটটি জলপূর্ণ করে, তার মধ্যে একটি সুপারি, একটি হলুদের গাঁট, দুর্বা, একটি এক টাকার কয়েন ও সামান্য আতপ চাল দিয়ে দিতে হবে। আম্র পল্লবে সিঁদুরের ফোঁটা দিয়ে ঘটের মধ্যে রাখতে হবে। 

লাল সিঁদুরের ফোঁটা দিয়ে একটি পান পাতা আমপল্লভের উপর রাখতে হবে। পান পাতার বোঁটার অংশটা ঘটের মঙ্গল চিহ্ন দিকে করে রাখতে হবে।

সিস্ ডাবের উপর গামছা, সিদ্ধিদাতা গণেশের উদ্দেশ্যে একটা পৈতে, শাঁখা-পোলা, চাঁদমালা, লাল চন্দন সহযোগে লাল জবার মালা, আর কিছু ফুল, তিনটি দুর্বা তিনটি  বেলপাতা দিতে হবে।

সবশেষে গঙ্গামাটি আর গঙ্গা জল দিয়ে একটি ময়াম বানিয়ে তার উপর সিঁদুর ফোটা, পঞ্চশস্য, আতপ চাল, ফুলের পাঁপড়ি, দূর্বা দিতে হবে। তারপর ঘটটি উলো ধ্বনি দিয়ে মায়ের সামনে স্থাপন করতে হবে। 

ঘট স্থাপন

Bipodtarini Puja vidhi at home: পূজা শুরু

|| নারায়ণাদির অর্চনা ||

প্রতিটি  মন্ত্র উচ্চারণ করে হাতে কিছু ফুল নিয়ে ঘটের উপর নিবেদন করতে হবে।

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ নারায়ণায় নমঃ 

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শ্রীগুরুবে নমঃ

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ গণেশায় নমঃ

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ দুর্গায়ৈ নমঃ

নমঃ বিপত্তারিণী দুর্গায় নমঃ

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শিবায় নমঃ

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ লক্ষ্মীদেবই নমঃ

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ স্বরস্বত্যৈ নমঃ

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ কার্তিকেয় নমঃ

এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ সর্ব দেবদেবীভ্যনম নমঃ

|| গুরু প্রণাম ||

মন্ত্র উচ্চারণ করে হাতে কিছু ফল নিয়ে হাতজোড় করে নিম্নলিখিত মন্ত্রে ঘটের উপর নিবেদন করতে হবে।

অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তংযেন চরাচরম্।

তৎপদাং  দর্শিতাং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।

|| ঘণ্টা পূজা ||

হাতে লাল চন্দন সহযোগে কিছু ফুল নিয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণ করে পূজার ঘন্টার উপর ছিটিয়ে দিতে হবে।

ঘণ্টা পূজা মন্ত্র :ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে জয়ধ্বনি- মন্ত্র-মাতঃ স্বাহা।

|| গণেশ পূজা ||

হাতে লাল চন্দন সহযোগে কিছু ফুল, তিনটি দূর্বা ও বেলপাতা নিয়ে হাতজোড় করে ভগবান গনেশের প্রণাম মন্ত্র:- “ও বক্রতুণ্ড মহাকায় সূর্য্যকোটি সমপ্রভ। নির্বিঘ্নং কুরু মে দেব সৰ্ব্বকার্য্যেযু সর্ব্বদা।” উচ্চারণ করে ঘটে নিবেদন করতে হবে।

|| ধাগা নিবেদন ||

মা বিপত্তারণীর পুজোয় তেরো সংখ্যাটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। মাকে তেরো রকম ফুল দিয়ে এদিন পুষ্পাঞ্জলি দিলে মা অত্যন্ত প্রসন্ন হন। বিপত্তারণী মায়ের পুজোয় লাল ধাগা বাঁধার প্রথা রয়েছে। 

প্রথমেই লাল সুতো তেরোবার পাক দিয়ে মাঝখানে তেরোটি দুরবা দিয়ে একটি গিট দিতে হবে। এবার দুই পাশে ছটি ছটি করে গিট দিয়ে এই ধাগাটি প্রস্তুত করা হয়। এবার এই ধাগা বাড়ির যতজন সদস্য আছেন সবার জন্য বানিয়ে নিয়ে সেই ধাগা মায়ের কাছে পুজোর সময় দিয়ে রাখতে হবে।

পুজোর শেষে এই লাল ধাগা ছেলেরা ডান হাতে এবং মহিলাদের বাম হাতে বাঁধতে হয়। বিশ্বাস করা হয় এই পবিত্র ধাগা সমস্ত বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করে থাকে। যদি এই ধাগা বাড়িতে বানানো সম্ভব না হয় তাহলে যেকোনো ফুলের দোকানে এই ধাগা পাওয়া যায়। 

|| আলতা সিঁদুর নিবেদন ||

এবার মাকে শাঁখা ও নোয়া ও আলতা সিঁদুর নিবেদন করতে হবে। মাকে তেল সিঁদুরের ফোঁটা দিতে হবে। একটি থালায় তেরোটি পান ও তেরোটি সুপারি দিয়ে মাকে নিবেদন করতে হবে। একইসঙ্গে মাকে তেরো রকম ফল ও তেরো রকমের মিষ্টি নিবেদন করতে হবে।

|| বিপদতারিণী পুষ্পাঞ্জলি ||

লাল চন্দন সহযোগে হাতে ফুল, বেলপাতা, দূর্বা নিয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণ করে তিনবার ঘটের উপর নিবেদন করতে হবে। 

বিপত্তারিণীদুর্গে ত্বং সর্বাশুভনিবারিণী। আয়ুরারোগ্যং দেহি মে মাহেশ্বরি প্রসীদ মে।। সর্বদুঃখহরা দেবী সর্বসন্তাপনাশিনী। আয়ুরারোেগ্যং বিজয়ং দেহি দেবি নমোহস্তুতে।। রোগশোকহরা দেবী সর্বসঙ্কটনাশিনী। সর্বস্যার্তিহরে দেবি প্রণমামি পুনঃ পুনঃ।। এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযজ্ঞ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকালৈ ভগবতৈ দুর্গায়ৈ নমঃ।।

|| আরতি পর্ব ||

সাধারণ নিত্য পুজোয় যা যা দিয়ে আরতি করা হয় অর্থাৎ ধূপকাঠি, তেলের প্রদীপ, ঘিয়ের প্রদীপ, কর্পূর এবং সুগন্ধি ধুনো দিয়ে বিপদতারিনী মাকে আরতি করতে হবে। নিত্যপূজার ক্ষেত্রে এই পাঁচটি জিনিস দিয়েই প্রত্যেকদিন আরতি করা ভালো।

|| বিপদতারিণী ব্রতকথা পাঠ ||

যে স্ত্রীলোক বিপদতারিণী ব্রতকথা পাঠ  করে সে সব বিপদ থেকে উদ্ধার পায়।

বিপদতারিণী ব্রতকথা

ব্রতের নিয়ম:- আষাঢ় মাসের শুক্লা তৃতীয়া থেকে নবমী তিথির ভেতর যে-কোনো শনি বা মঙ্গলবারে এই ব্রত করতে হয়। ঘটস্থাপন করে তাতে আম্রপল্লব দিয়ে এই পুজো করতে হয়।

ব্রতের ফল:- এই ব্রত করলে সংসারের সকল বিপদ কেটে যায়।

ব্রতকথা:- ব্রতকথা-বিদর্ভ দেশে এক রাজা ছিলেন। তাঁর রানী অতিশয় ভক্তিমতী ও বন্ধুবৎসল। তিনি নিষ্ঠা সহকারে বিপত্তারিণীর ব্রত করতেন। এক মুচিনীর সঙ্গে তার খুব সখ্য হয়েছিল। মুচিনীকে তিনি প্রায়ই নানা ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্য উপহার দিতেন। মুচিনী গরিব, তবু তার বড় ইচ্ছা রানীকে কিছু দেয়। রানী রোজই বলেন, যে একদিন তোমার কাছ থেকে চেয়ে নেব। কিন্তু চাওয়া আর হয় না। 

একদিন রানী বললেন, তোমরা তো গোমাংস রান্না করো, একদিন তাই একটু নিয়ে এসো আমার জন্যে, দেখব কী রকম। মুচিনী তো আহ্লাদে আটখানা। পরম যত্নে সে গোমাংস রাঁধল। তারপরে কাপড় চাপা দিয়ে তা রাজবাড়িতে নিয়ে এসে রানীর হাতে দিল। রানী সযত্নে তা তুলে রাখলেন। খাবেন না কখনোই, দেখবেন শুধু। মুচিনী গোপনে গোমাংস দিয়ে গেছে বটে, কিন্তু রাজবাড়ির একটি চাকর তা দেখেছে। 

সেই চাকরটি রাজাকে সব বলে দিতেই রাজা রানীর কাছে ছুটে এসে জানতে চাইলেন, মুচিনী কী রেখে গেছে। যদি আপত্তিকর কিছু সে রেখে গিয়ে থাকে তাহলে রানীর গর্দান যাবে। রানী বিপদে পড়লেন। তিনি একমনে ডেকে চললেন মা-দুর্গা বিপত্তারিণীকে। মা-দুর্গা তাকে কানে কানে বললেন, দেখগে সব ফুল হয়ে আছে। রানী তখন রাজাকে এনে দেখালেন সেই ফুল। রাজা চাকরকে তিরস্কার করলেন। বিপত্তারিণী মা দুর্গার দয়ায় এইভাবে রানীর বিপদ কেটে গেল। সেই থেকে এই ব্রতের কথা সর্বত্র প্রচার হয়ে গেল।

বিপত্তারিণী ব্রতকথা সমাপ্ত

বিপদতারিনী মার কাছে প্রণাম করে নিজের মনস্কামনা নিবেদন করে নিতে হবে এবং পুজোয় কোন ত্রুটি হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

বিপদতারিনী পূজা সমাপ্ত