আজ আমরা জানবো সহজ পদ্ধতিতে কিভাবে নিত্য শিবপূজা (Shivpuja at home) ঘরে করা যায়। সোমবারে বাবা মহাদেবের পুজো করলে অত্যন্ত অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়, মহাদেব খুব প্রসন্ন হন।
যারা নিত্যদিন করতে পারেন না বাবার সেবা যাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা শুধু সোমবার বাবা মহাদেবকে পুজো করতে পারেন। তাছাড়া শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার বাবা মহাদেবের মাথায় জল দিয়ে পূজা করাকে খুব শুভ ধরা হয়।
Shivpuja at home: নিত্য শিব পূজা
পুজোতে বসে প্রথমেই হাতে সামান্য গঙ্গা জল নিয়ে আচমন করে নিতে হবে। যেকোনো পূজার শুরু করার আগে আচমন করে শুদ্ধ করে নিতে হয়। সেই পূজা নিত্য গৃহপূজা হোউক কিংবা বিশেষ পূজা।
আচমন করে, পুষ্প ও জল শুদ্ধি করে নিতে হবে। যদি ঘরে গঙ্গা জল থাকে সেক্ষত্রে জল শুদ্ধি করার কোনো প্রয়োজন নাই। টেপের জল, জলাশয়ের জলকে সব সময় শুদ্ধ করে পূজায় ব্যাবহার করতে হবে।
Table of Contents
Shivpuja at home: শিব পূজার অভিষেক
শ্বেতচন্দনের গুঁড়ো অথবা ভস্ম দিয়ে অভিষেক করা যেতে পারে। এই ভস্ম যেকোনো দশকর্মার দোকানে পাওয়া যাবে সহজেই।
শিবঠাকুরের অভিষেকের সময় ঘণ্টা বাজানো খুব ভালো। তারপর দুধ দিয়ে অভিষেক করাতে হবে। অভিষেক করানোর মন্ত্রটি হল ইদং স্নানিয়ং দুগ্ধ ও হো ঈশানায় নমঃ।
এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে, কর্পূরের গুঁড়ো মেশানো গঙ্গাজল দিয়ে শিবঠাকুরের অভিষেক করে নিতে হবে। মনে মনে ওম নামা শিবায় মন্ত্র বা শিবঠাকুরের স্নান মন্ত্র জপ করতে হবে।
Shivpuja at home: শিব পূজার পুষ্প নিবেদন
শিবঠাকুর হচ্ছেন বৈষ্ণব প্রধান তাই শিবপূজায় শ্বেত চন্দন বেবহার করা হয়।শ্বেত চন্দন সহযোগে ফুল এবং বেলপাতা নিয়ে বাবা মহাদেবকে তিনবার পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করতে হবে।
শিবঠাকুরের পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রটি হল “ওঁম নমঃ শিবায় এসো সচন্দন পুষ্পবিল্যপত্রাঞ্জলি, নমঃ শিবায় নমঃ।”
ইদং সচন্দন পুষ্পং শিবায় নামঃ এই মন্ত্র পথ করে শিবঠাকুরকে শ্বেতচন্দন সহযোগে ফুল নিবেদন করে দিতে হবে। শিবঠাকুরকে ধুতরা, আকন্দ, নীলকণ্ঠ ফুল, কলকে ফুলগুলি বেশি করে নিবেদন করা যেতে পারে। এছাড়াও সাদা ফুল এবং হলুদ ফুলে নিবেদন করা যায়। শ্বেতপদ্ম এবং গোলাপ দিয়েও বাবা মহাদেবকে নিবেদন করা যেতে পারে।
Shivpuja at home: শিব পূজার ভোগ নিবেদন
বাবা মহাদেবকে বাতাসা এবং সাদা মিষ্টির ভোগ ফুল ও বেলপাতা সহযোগে নিবেদন করা যেতে পারে। বিশেষ বিশেষ পূজার ক্ষেত্রে যেমন শ্রাবন মাসের সোমবার, শিবরাত্রিতে বেলসহ পাঁচ রকমের গোটা ফল ফুল ও বেলপাতা সহযোগে নিবেদন করা যেতে পারে। দৈনন্দিন পূজায় এতো আয়োজনের প্রয়োজন হয়না।
শিবপুজোতে গোটা ফলের নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। তিন রকম, পাঁচ রকম অথবা সাত রকমের গোটা ফল দেওয়া যায়।
Shivpuja at home: শিব পূজার আরতি নিবেদন
পুষ্প ও ভোগ নিবেদনের পর আরতি শুরু করতে হবে। কিভাবে আরতি করতে হবে তা বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
Shivpuja at home: শিব পূজার ব্রতকথা ও জপ করা
আরতি সম্পন্ন করে একশো আটবার ওঁম নমঃ শিবায় জপ করে নিতে হবে। যদি ঘরে স্ফটিকের একশো আট ব্রিডের মালা কিংবা একশো আট পঞ্চমুখী রুদ্রাক্সের মালায় এই জপ করা যেতে পারে। মালা ঘরে না থাকলে হাতের আঙুলে ও করা যেতে পারে।
জপ পর্ব সম্পন্ন করে অষ্টোত্তর শতনাম পাঠ করতে হবে। নিম্নে অষ্টোত্তর শতনাম উল্লেখ করা হয়েছে। দশকর্মার দোকানেও এই অষ্টোত্তর শতনামের বই পেয়ে যাবেন।
শ্রী শ্রী শিবের অষ্টোত্তর শতনাম
অনাদির আদি নাম রাখিল বিধাতা ।।
মহাবিষ্ণু নাম রাখে দেবের দেবতা ।।
জগদগুরু নাম রাখিল মুরারি ।
দেবগণ মোর নাম রাখে ত্রিপুরারি ।।
মহাদেব বলি নাম রাখে শচীদেবী ।
গঙ্গাধর বলি নাম রাখিল জাহ্নবী ।।
ভাগীরথী নাম রাখি দেব শূলপানি ।
ভোলানাথ বলি নাম রাখিল শিবানী।।
জলেশ্বর নাম মোর রাখিল বরুণ ।
রাজ রাজেশ্বর নাম রাখে রুদ্রগণ ।।
নন্দী রাখিল নাম দেবকৃপাসিন্ধু ।
ভৃঙ্গী মোর নাম রাখে দেব দীনবন্ধু ।।
তিনটি নয়ন বলি নাম ত্রিলোচন ।
পঞ্চমুখ বলি মোর নাম পঞ্চানন ।।
রজত বরণ বলি নাম গিরিবর ।
নীলকণ্ঠ নাম মোর রাখে পরাশর ।।
যক্ষরাজ নাম রাখে জগতের পতি ।
বৃষভবাহন বলি নাম রাখে পশুপতি ।।
সূর্য দেব নাম রাখে দেব বিশ্বেশ্বর ।
চন্দ্রলোকে রাখে নাম শশাঙ্কশেখর ।।
মঙ্গল রাখিল নাম সর্বসিদ্ধিদাতা ।
বুধগণ নাম রাখে সর্বজীবত্রাতা ।।
বৃহষ্পতি নাম রাখে পতিতপাবণ ।
শুক্রাচার্য নাম রাখে ভক্ত প্রাণধন ।।
শনৈশ্বর নাম রাখে দয়ার আধার ।
রাহুকেতু নাম রাখে সর্ববিধুহরি ।।
মৃত্যুঞ্জয় নাম মোর মৃত্যুকে জয় করি ।
ব্রহ্মলোকে নাম মোর রাখে জটাধারী ।।
কাশীতীর্থ ধামে নাম মোর বিশ্বনাথ ।
বদরিকাননে নাম হয় কেদারনাথ ।।
শমন রাখিল নাম সত্য সনাতন ।
ইন্দ্রদেব নাম রাখে বিপদতারণ ।।
পবন রাখিল নাম মহা তেজোময় ।
ভৃগুমণি নাম রাখে বাসনা বিজয় ।।
ঈশান আমার নাম রাখে জ্যোতিগণ ।
ভক্তগণ নাম রাখে বিঘ্ন বিনাশন ।।
মহেশ বলিয়া নাম রাখে দশানন ।
বিরূপাক্ষ বলি নাম রাখে বিভীষণ ।।
শম্ভুনাথ বলি নাম রাখেন ব্যাসদেব ।
বাঞ্ছাপূর্ণকারী নাম রাখে শুকদেব ।।
জয়াবতী নাম রাখে দেব বিশ্বপতি ।
বিজয়া রাখিল নাম অনাথের পতি।।
তালবেতাল নাম রাখে সর্ববিঘ্নহর ।
মাকর্ণ্ড রাখিল নাম মহা যোগেশ্বর ।।
শ্রীকৃষ্ণ রাখিল নাম ভুবন ঈশ্বর ।
ধ্রুবলোকে নাম রাখে ব্রহ্মপরাৎপর ।।
প্রহ্লাদ রাখিল নাম নিখিলতারণ ।
চিতাভষ্ম মাখি গায় বিভুতিভূষণ ।।
সদাশিব নাম রাখে যমুনা পুণ্যবতী ।
আশুতোষ নাম রাখে দেব সেনাপতি ।।
বাণেশ্বর নাম রাখে সনৎকুমার ।
রাঢ়দেশবাসী নাম রাখে তারকেশ্বর ।।
ব্যাধিবিনাশন হেতু নাম বৈদ্যনাথ ।
দীনের শরণ নাম রাখিল নারদ ।।
বীরভদ্র নাম মোর রাখে হলধর ।
গন্ধর্ব রাখিল নাম গন্ধ ঈশ্বর ।।
অজিরা রাখিল নাম পাপতাশহারী ।
দর্পচূর্ণকারী নাম রাখিল কাবেরী ।।
ব্যাঘ্রার্ণ পরিধান নাম বাঘাম্বর ।
বিষ্ণুলোকে রাখে নাম দেব দিগম্বর ।।
কৃত্তিবাস নাম রাখে দেবী ক্যাত্যায়নী ।
ভূতনাথ নাম রাখে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি ।।
সদানন্দ নাম রাখে দেব জনার্দন ।
আনন্দময় নাম রাখে শ্রীমধুসূদন ।।
রতিপতি নাম রাখে মদন-দহন ।
দক্ষরাজ নাম রাখে যজ্ঞ বিনাশন ।।
জগদগ্নি নাম মোর রাখিল গঙ্গেশ ।
বশিষ্ঠ আমার নাম রাখে গুড়াকেশ ।।
পৌলস্ত রাখিল নাম ভবভয়হারী ।
গৌতম রাখিল নাম জনমনে হারী ।।
ভৈরবেতে নাম রাখে শ্মশান ঈশ্বর ।
বটুক ভৈরব নাম রাখে ঘণ্টেশ্বর ।।
মর্ত্যলোকে নাম রাখে সর্বপাপহর ।
জরৎকারু মোর নাম রাখে যোগেশ্বর ।।
কুরুক্ষেত্রে রণস্থলে পামবরদ্বারী ।
ঋষিগণ নাম রাখে মুনি মনোহারী ।।
ফণিভূষণ নাম মোর রাখিল বাসুকী ।
ত্রিপুরে বধিয়া নাম হইল ধানুকী ।।
উদ্দীলক নাম রাখে বিশ্বরূপ মোর ।
অগস্ত্য আমার নাম রাখিল শংকর ।।
দক্ষিণ দেশেতে নাম হয় বালেশ্বর ।
সেতু বন্ধে নাম মোর হয় রামেশ্বর ।।
হস্তিনা নগরে নাম দেব যোগেশ্বর ।
ভরত রাখল নাম ঊমা মহেশ্বর ।।
জলস্বর নাম রাখে করুণা সাগর ।
মম ভক্তগণ বলে সংসারের সার ।।
ভদ্রেশ্বর নাম মোর রাখে বামদেব ।
চাঁদ সদাগর রাখে নাম হয়গ্রীব ।।
জৈমিনি রাখিল নাম মোর ত্র্যম্বকেশ ।
ধন্বন্তরি মোর নাম রাখিল উমেশ ।।
দিকপাল গণে নাম রাখিল গিরীশ ।
দশদিক পতি নাম রাখে ব্যোমকেশ ।।
দীননাথ নাম মোর কশ্যপ রাখিল ।
বৈকুণ্ঠের পতি নাম নকুল রাখিল ।।
কালীঘাটে সিদ্ধপার্টে মকুল ঈশ্বর ।
পুরীতীর্থ ধামে নাম ভুবন ঈশ্বর ।।
গোকুলেতে নাম মোর হয় শৈলেশ্বর ।
মহাযোগী নাম মোর রাখে বিশ্বম্ভর ।।
কৃপানিধি নাম রাখে রাধাবিনোদিনী ।
ওঁকার আমার নাম রাখে সান্দীপানি ।।
ভক্তের জীবন নাম রাখেন শ্রীরাম ।
শ্বেত ভূধর নাম রাখেন ঘনশ্যাম ।।
বাঞ্ছাকল্পতরু নাম রাখে বসুগণ ।
মহালক্ষ্মী রাখে নাম অশিব নাশন ।।
অল্পেতে সন্তোষ বলি নাম যে সন্তোষ ।
গঙ্গজল বিল্বদলে হই পরিতোষ ।।
ভাঙ্গরভোলা নাম বলি ডাকে ভক্তগণ ।
বুড়োশিব বলি খ্যাত এই ত্রিভুবন ।।
Shivpuja at home: নিত্য শিবপূজা সমাপ্ত
FAQs:-
কোন শিব লিঙ্গের পূজা ঘরে করা যায়?
শুধু কালো রঙের শিবলিঙ্গ ব্যবহার করা উচিৎ বাড়িতে পূজা করার জন্য। সাদা রঙের শিবলিঙ্গ হচ্ছেন রুদ্র শিবের প্রতীক। সাদা শিবলিঙ্গ ঘরে রাখতে নেই এবং এতে কোনো গৃহস্তের পূজা করা উচিত নয়।
শিব লিঙ্গ ঘরের আসনে কোথায় স্থাপন করা যায়?
শিব লিঙ্গের বাইরের অংশ সবসময় উত্তর দিকে মুখ করে রাখতে হবে। শিব লিঙ্গের পাশে কখনো নটরাজের মূর্তি, শিবের ছবি রাখা যাবে না।