পুরুষোত্তম শ্রী রামচন্দ্রের সবথেকে বড় ভক্ত হলেন শ্রী হনুমান। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে অর্থাৎ রামনবমীর ঠিক ছয়দিন পর শ্রীহনুমানজি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তাই এই বিশেষ তিথিতেই হনুমান জয়ন্তী (Hanuman Jayanti at home) পালন করা হয়।
মনে করা হয় হনুমানজি অমর। কলিযুগের জাগ্রত দেবতারূপে হনুমানজির পুজো করা হয়। ছেলে মেয়েরা নির্বিশেষে হনুমানের পূজা করতে পারেন।
Table of Contents
ঘরোয়া হনুমান জয়ন্তী (Hanuman Jayanti at home) পূজা পর্ব
সনাতন হিন্দুধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনের সকল বাধা বিপত্তি এবং সংকট কাটিয়ে উঠতে শ্রীহনুমানজি আমাদের সহায়তা করেন। তাই তো তিনি সংকটমোচন শ্রী হনুমান। হনুমান জয়ন্তীতে ভক্তি ও নিষ্ঠা সহকারে শ্রী হনুমানজির পুজো (Hanuman Jayanti at home) করলে তিনি ভক্তকে সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। আচমন করা হচ্ছে যেকোনো পূজা শুরু করার প্রথম ধাপ।
যে কোনো পূজা শুরুর পূর্বে নিজেকে শুদ্ধ করে নেওয়া উচিৎ। এই শুদ্ধ করে নেওয়ার পক্রিয়াকে আচমন ক্রিয়া বলে। আচমনের জন্য বিষ্ণু নাম স্মরণ করে এই পক্রিয়া সম্পাদন করতে হবে। আচমনের পদ্ধতিটি বিস্তারিত ভাবে আমাদের Ghoruapuja– ঘরোয়াপূজার সাধারণ নিয়ম পেইজটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুষ্পশুদ্ধি প্রক্রিয়াটি ঘরোয়াপূজার- ঘরোয়াপূজার সাধারণ নিয়ম পেইজটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে পূজার সকল অত্যাবশ্যক পক্রিয়াগুলি সুন্দর ও সহজভাবে ব্যখ্যা করা হয়েছে।
ঘরোয়া হনুমান জয়ন্তী আসন প্রস্তুতি
যদি ঘরের আসনে প্রতিষ্টিত হনুমান ঠাকুর থাকেন সেটা ছবি বা মূর্তি যেভাবেই হউক, তা সবসময় লাল রঙের কাপড় পেতে বসাতে হবে।
আর যদি আলাদা আসন পেতে পূজা করতে হয় তাহলে একটি পরিষ্কার কাঠের পিঁড়ির ওপর গঙ্গাজল ছিটিয়ে লাল রঙের কাপড় পেতে নিতে হবে। তার ওপর আরো কিছুটা গঙ্গাজল ছিটিয়ে কিছুটা ফুলের পাপড়ি এবং গোটা আতপ চাল দিতে হবে। এইভাবে হনুমানজির পূজার আসন প্রস্তুত করে নিতে হবে।
ঘরোয়া হনুমান জয়ন্তী প্রদীপ প্রজ্জ্বলন
প্রত্যেক বিশেষ পুজোর মতোই হনুমান জয়ন্তীর দিন (Hanuman Jayanti at home) হনুমানজির উদ্দেশ্যে নতুন মাটির প্রদীপ প্রজ্বোলন করতে হয়। প্রদীপের লাল রঙের সলতে ব্যবহার করা খুব শুভ। লাল রঙের সলতে না পাওয়া গেলে সাদা রঙের সলতে ব্যবহার করে যেতে পারে।
প্রদীপে চামেলির তেল বা ঘি দেওয়া হয়। চামেলির তেল বা ঘি ছাড়াও সর্ষের তেল দিয়েও প্রদীপ জ্বালানো যায়। প্রদীপে তিনটে মেটে সিঁদুরের ফোঁটা দিতে হবে। একই সঙ্গে ধূপকাঠি, ধূপ ও ধরিয়ে নিতে হবে।
ঘরোয়া হনুমান জয়ন্তী স্নানাভিষেক পর্ব
তার জন্য একটি পাত্রের ওপর কিছুটা ফুলের পাপড়ি দিয়ে হনুমানজির মূর্তিটি বসিয়ে নিতে হবে। পঞ্চামৃত দিয়ে হনুমানজির অভিষেক করতে হবে।
একটি পাত্রে কাঁচা দুধ, দই, ঘি, মধু এবং শর্করা বা চিনি একসাথে মিশিয়ে পঞ্চামৃত তৈরি করে করে হনুমানজির পূজার মন্ত্র “ওঁ হনুমতে নমঃ” স্মরণ করতে করতে ঞ্চামৃত দিয়ে হনুমানজির অভিষেক করে নিতে হবে।
এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে আমি হনুমানজির বিগ্রহটি ধুয়ে নিয়ে একটি সূতির পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মূর্তিটি মুছে নিয়ে আসনে বস্তাতে হবে।
যদি ছবি থাকে সেক্ষেত্রে একটি পরিষ্কার কাপড় গোলাপ জল, গঙ্গাজল অগরু মিশ্রিত জলে ভিজিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হনুমানজিৎ ছিবিটি মুছে নিতে হবে।
ঘরোয়া হনুমান জয়ন্তী (Hanuman Jayanti at home) পুজো শুরুর পর্ব
Hanuman Jayanti at home: শ্রীরামচন্দ্রের পুজো
শ্রী হনুমানজির পুজো (Hanuman Jayanti at home) শুরু করার আগে আমাদের শ্রীরামচন্দ্রের পুজো করে নিতে হয়। যদি ঘরে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের কোনো বিগ্রহ বা ছবি থাকে আগে সেখানে পুজো করে নিয়ে তারপর হনুমানজির পুজো শুরু করতে হবে।
যদি ঘরে শ্রীরামচন্দ্রের কোনো বিগ্রহ বা ছবি না থাকে তাতে কোনো অসুবিধা নেই কুলগুরুকে শ্রীরামচন্দ্র জ্ঞানে পুজো করে নিতে পারেন। শ্রীরামচন্দ্র হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সবজাগায় সবকিছুতে বিরাজমান।
আমরা এখানে ধরে নিচ্ছি আপনার ঘরে শ্রীরামচন্দ্রের বিগ্রহ আছে। প্রথমে শ্রীরামচন্দ্রকে শ্বেতচন্দনের তিলক পরিয়ে দিতে হবে। শ্রীরামচন্দ্রের উদ্দেশ্যে শ্বেতচন্দন সহযোগে তুলসী পাতা এবং তুলসী দল নিবেদন করে দিতে হবে।
শ্রীরামচন্দ্রের পূজার মন্ত্র:- ওঁ শ্রীরামচন্দ্রায় নমঃ
শ্বেতচন্দন সহযোগে একটি হলুদ ফুল আমি শ্রী রামচন্দ্রের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে দিতে হবে।
হনুমানজির বুকেই শ্রীরামচন্দ্র থাকেন, তাই হনুমানজির বিগ্রহের বুকে শ্বেতচন্দন সহযোগে একটি তুলসীপাতা আমি শ্রীরামচন্দ্রের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে দিতে হবে।
হাত জোড় করে আমি শ্রী রামচন্দ্রের প্রণাম মন্ত্র পাঠ করে নিচ্ছি।
শ্রীরামচন্দ্রের প্রণাম মন্ত্র:-
রামায় রামভদ্রায় রামচন্দ্রায় বেধসে।
রঘুনাথায় নাথায় সীতায়াহ পতয় নমঃ।।
শ্রীরামচন্দ্রের পূজা সমাপ্ত
ঘরোয়া হনুমান জয়ন্তী মূল পুজো শুরু
শ্রীরামচন্দ্রের পুজো সম্পন্ন করে হনুমানজির পুজো (Hanuman Jayanti at home) শুরু করতে হবে। প্রথমে হনুমানজিকে মেটে সিঁদুরের (কমলা রঙের) তিলক পরিয়ে দিতে হবে। মেটে সিঁদুর না থাকলে লাল রঙের সিঁদুর ব্যবহার করা করা যেতে পারে। তারপর ভগবান হনুমানকে লাল চন্দনের তিলক এবং পৈতে নিবেদন করতে হবে।
হনুমানজির পুজোয় (Hanuman Jayanti at home) একটি লাল জবার মালা, লাল চন্দন সহযোগে হনুমানজিকে নিবেদন করে দিতে হবে। ভগবান হনুমানের গোলাপ ফুল অত্যন্ত ভালোবাসেন, গোলাপের মালা হনুমানজিকে নিবেদন করা যেতে পারে।
যদি সম্ভব হয় তোমরা হনুমান জয়ন্তীর দিন একটা ছোট্ট পিতলের গদা বা একটা ছোট্ট রুপোর গদা হনুমানজিকে উপহারস্বরূপ নিবেদন করতে পারো। উনি এতে অত্যন্ত খুশি হন।
সম্ভব হলে হনুমানজির জন্য একটি অশথ পাতার মালা তৈরি করে নিবেদন করা যেতে পারে। পাঁচ, সাত অথবা এগারোটি অশথ পাতা দিয়ে একটি মালা তৈরী করে নিতে হবে। অশথ পাতার প্রতিটি পাতায় সিঁদুর দিয়ে জয় শ্রীরাম লিখে নিতে হবে।
হনুমানজির পূজার মন্ত্র “ওঁ হনুমতে নমঃ” পাঠ করতে করতে মালা পরিয়ে দিতে হবে। একই মন্ত্র উচ্চারণ করে হনুমানজির বিগ্রহে বা ছবিতে তিনটি লাল ফুল লাল চন্দন সহযোগে নিবেদন করে দিতে হবে। তারপর হাতজোড় করে শ্রী হনুমানজির প্রণাম মন্ত্র পাঠ করতে হবে।
শ্রী হনুমানজির প্রণাম মন্ত্র:-
মনোজবং মারুততুল্য বেগং জিতেন্দ্রীয় বুদ্ধিমতং বরিষ্ঠং।
বাতাতজং বানরযুথং মুখখং শ্রীরামদূতং শীর্ষ নমামি।।
একটি পান পাতার উপর মেটে সিঁদুরের ফোঁটা দিয়ে তার উপর একটি গোটা সুপারি, পাঁচটা গোটা লবঙ্গ এবং পাঁচটা গোটা এলাচ সহযোগে ভগবান হনুমানজিকে নিবেদন করতে হবে। পুজোর পরে এগুলি একটা লাল কাপড়ে বেঁধে ঘরে রেখে দিতে হবে।
ভোগ নিবেদন
ভোগ নিবেদন করার জন্য আমি একটি পানপাতার ওপর গুড় আর ছোলা নিয়ে নিয়ে নিবেদন করতে হবে। গুড় আর ছোলার ভোগ হনুমানজির অত্যন্ত প্রিয়। ফুল এবং তুলসী পাতার সহযোগে মিষ্টি, ফল হনুমানজিকে নিবেদন করতে হবে।
আরতি পর্ব
ভগবান হনুমানকে ধূপকাঠি, ফুল, সরষের তেলের প্রদীপ, ঘিয়ের পঞ্চ প্রদীপ, দিয়ে নবার করে আরতি করতে হবে।
হনুমান চালিসা পাঠ
হনুমান জয়ন্তীর দিন (Hanuman Jayanti at home) অবশ্যই হনুমান চালিসা পাঠ করতে হবে। সম্ভব হলে একুশ থেকে একচল্লিশবার হনুমান চালিসা পাঠ করা যেতে পারে। যদি একচল্লিশবার সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত এগারোবার অবশ্যই হনুমান চালিসা পাঠ করতে হবে।
হনুমানজীর পুজোর পরে অবশ্যই হনুমান চালিসা পাঠ করতে হবে। হনুমানজির মাতা দেবী অঞ্জনা এবং হনুমানজির আরাধ্য ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের নাম স্মরণ করে হনুমান চালিসা পাঠ করা শুরু করতে হবে।
শ্রীহনুমানাষ্টক পাঠ
হনুমান চালিসা পাঠ করা হয়ে যাওয়ার পর শ্রী হনুমানাষ্টক পাঠ করে নিতে হবে। হনুমান চালিসা পাঠ শেষ করে।
মনে মনে প্রভু হনুমানজিকে পূজা গ্রহণ করার জন্য আবেদন করতে হবে. এই বলে “হে প্রভু আমার এই পূজা তুমি গ্রহণ করো আর আমাকে তুমার আশীর্বাদ প্রদান করো” করজোড়ে প্রণাম করতে হবে।
এরপর ভগবান হনুমানজির উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে নিজের মনস্কামনা নিবেদন করে, পুজোয় কোনও ভুলত্রুটি হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নিতে হবে।
দৈনিক হনূমান পূজা
দৈনিক হনূমান পূজায় শ্রী রামচন্দ্রের পূজার প্রয়োজন পড়েনা, শুধু হনূমান চালিশা পাঠ করে পূজা সম্পন্ন করা যায়। নিত্য পূজায় স্নানাভিষেক, তিলক বা শৃঙ্গার, পুষ্প নিবেদন, ও ভোগ আরতি পর্ব শেষ করে চালিশা পাঠ দিয়ে পূজা সম্পন্ন করা যায়।